ভারতের কৃষি
ভারত কৃষি প্রধান দেশ দেশের প্রায় অর্ধেক শ্রমজীবী মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে (জাপানের ৬ শতাংশ এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ৩ শতাংশ অধিবাসী কৃষিজীবী)।
▲ভারতীয় কৃষির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য: ভারতীয় কৃষির কতগুলি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন—
◉ জীবিকা সত্ত্বাবৃত্তিক কৃষি: ভারতীয় কিসের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি। জনসংখ্যা খুব বেশি বলে উৎপাদিত ফসলের বেশিরভাগটাই নিজেদের জীবনধারণে ব্যবহৃত হয় ।রপ্তানিযোগ্য উদ্বৃত্ত বিশেষ থাকেনা।
◉ জনসংখ্যার চাপ: কৃষিকাজে অত্যাধিক মানুষ নিয়োজিত থাকে অর্থাৎ কৃষির উপর জনসংখ্যা চাপ অত্যন্ত বেশি। তাই ভারতীয় কৃষি হলো শ্রম নিবিড় কৃষি।
◉ কৃষিতে পশু শক্তির প্রাধান্য: কৃষি জমিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি (ট্রাক্টর, হারভেস্টার) পরিবর্তে অধিকাংশ স্থানের লাঙ্গল দিয়ে জমি কর্ষণ থেকে শুরু করে উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে বহন করে আনা– প্রায় সব কাজেই পশু শক্তি ব্যবহৃত হয়।
◉ মৌসুমী বৃষ্টির উপর নির্ভরতা: বেশিরভাগ জায়গায় মৌসুমী বৃষ্টির উপর নির্ভর করে বছরে একবার কৃষি কাজ করা হয়।
◉ জল সেচের ব্যবহার: যেসব জমিতে জল সেচের ব্যবস্থা আছে, সেই সব স্থানের বছরে দুটি বা তিনটি ফসল উৎপাদিত হয়।
◉◉ ক্ষুদ্রাকৃতি জমিজোত : অধিকাংশ কৃষক খুব অল্প জমির মালিক। উত্তরাধিকার সূত্রে আবার এই অল্প জমি ক্রমশ ভাগ হতে হতে আরো ক্ষুদ্র হয়।
◉ কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার: সুবিধা- অসুবিধা, প্রয়োজন- অপ্রয়োজন বিচার না করেই উৎপাদন বৃদ্ধির আশায় জমিতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয়। এতে মৃত্তিকা দূষণ ও জল দূষণ সহ বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি আশঙ্কা থাকে।
◉ খাদ্যশস্যের প্রাধান্য: দেশের মোট কৃষি জমির শতকরা প্রায় ৬৬ ভাগে ধান, গম প্রভৃতি খাদ্যশস্যের চাষ করা হয়।
◉ পশু খাদ্যের অভাব: ভারতের কৃষি পশু শক্তির উপর অনেকটাই নির্ভরশীল হলেও দেশে পশু খাদ্য চাষের প্রচলন কম। তাই এখানে পশু খাদ্যের অভাব প্রকট।
◉ বহু সর্ষের উৎপাদন: কৃষি কাজে বিশেষায়ন হয়নি। তাই এখানে বহু রকম শস্য উৎপাদিত হয়, যেমন- ধান, গম, জোয়ার, বাজরা, রাগে ভুট্টা প্রভৃতি খাদ্যশস্য; সরিষা, বাদাম, সূর্যমুখী প্রভৃতি তৈলবিজ; মুগ, মসুর,ছোলা, বিউলি, মটর প্রভৃতি প্রকার ডাল; পাট,তুলো, মেছতা প্রভৃতি তন্তু শস্য; চা, কফি, রবার, আখ প্রভৃতি বাণিজ্যিক শস্য।
▲ কৃষিজ ফসলের প্রকারভেদ: ভারতের কৃষিজ ফসল কে দু- ভাবে শ্রেণীবিভাগ করা যায়: ব্যবহার অনুসারে এবং ঋতু অনুসারে।
☛ ব্যবহার অনুসারে ফসলের শ্রেণীবিভাগ: ব্যবহার অনুসারে ভারতের কৃষিজো ফসল কে আবার চারটি বিভাগে ভাগ করা যায়।—
(১) খাদ্য ফসল: খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত কৃষিজ ফসল গুলির নাম খাদ্যফসল। এগুলি আবার দুই প্রকার: দানাশস্য, যেমন- ধান, গম, জব, জোয়ার, বাজরা প্রভৃতি এবং ডাল জাতীয় শস্য, যেমন- মুগ, মসুর, ছোলা প্রভৃতি।
(২) তন্তু ফসল: যে ফসল থেকে প্রধানত তন্তু বা সুতো তৈরি হয় তার নাম তন্তু ফসল। যেমন- তুলো, পাট, শন, মেছতা প্রভৃতি।
(৩) বাগিচা ফসল: প্রধানত রপ্তানির জন্য আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে বৃহদায়তন খামারের মধ্যে যখন কোন একটি নির্দিষ্ট ফসল চাষ করা হয় তখন সেই ফসলটিকে বাগিচা ফসল বলে। যেমন- চা, কফি, রাবার প্রভৃতি।
(৪) অন্যান্য ফসল: ভারতে আরো কয়েক প্রকার ফসল উৎপাদিত হয়, যেমন- আখ, আলু বিভিন্ন প্রকার ফল, সবজি, তৈলবিজ প্রকৃতি।
☛ ঋতু অনুসারে ফসলের শ্রেণীবিভাগ: ফসল রোপণের সময় অর্থাৎ ঋতু অনুসারে ভারতে তিন প্রকার ফসল উৎপাদিত হয়। এগুলি হল—
(১) খারিফ ফসল: গ্রীষ্মকালে বিশেষত বর্ষার প্রারম্ভে এগুলি চাষ শুরু হয় এবং শরতের শেষে ফসল কাটা হয়, যেমন- আমন ধান, তুলো, আখ, জোয়ার, বাজরা, রাগী, ভুট্টা, চিনাবাদাম প্রভৃতি।
(২) রবি ফসল: শীতের প্রারম্ভে এগুলি চাষ শুরু হয় এবং গ্রীষ্মের প্রারম্ভে ফসল কাটা হয়। উদাহরণ - গম, জব, আলু, সরষে, ডাল ইত্যাদি।
(৩) জাহিদ ফসল: এগুলি বসন্তকালে অর্থাৎ ফাল্গুন (মার্চ) মাসে চাষ করা হয় এবং বর্ষার প্রারম্ভ অর্থাৎ আষাঢ় (জুন) মাসের সংগ্রহ করা হয়। উদাহরণ- কুমড়ো, বরবটি, শসা, পটল, পুইশাক, নোটেশাক, তরমুজ, ফুটি, কাকড় ইত্যাদি।
▲ ভারতীয় কৃষির সমস্যা ও সমাধান:—
◉ বৃষ্টি নির্ভর কৃষি: ভারতীয় কৃষি প্রধানত মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় বেশিরভাগ কৃষি জমিতে বছরে কেবলমাত্র একবার অর্থাৎ বর্ষাকালে ফসল উৎপাদন করা যায়।
সমাধান: জল সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করে ওই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা চলেছে।
◉ প্রাচীন পদ্ধতি: অধিকাংশ অঞ্চলে প্রাচীন পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করা হয় বলে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদন খুব কম।
সমাধান: কৃষিকাজে প্রয়োজনমতো উচ্চফলনশীল বীজ, সার, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এবং কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বাড়ানো যায়।
◉ ক্ষুদ্র কৃষিজোত: কৃষিজোত গুলি ছোট হওয়ায় আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করা যায় না।
সমাধান: খন্ড খন্ড জমি একত্রিত করে সমবায় কৃষি পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে।
◉ ক্ষুদ্র ও ভূমিহীন কৃষক: বেশিরভাগ কি সব ভূমীহীন অথবা ক্ষুদ্র জমির মালিক।
সমাধান: আইন সংস্কার আইন প্রণয়ন এবং তার সঠিক প্রয়োগ দরকার।
Comments
Post a Comment