বজ্র ব্যবস্থাপনা


 

বজ্রের ধারণা- প্রতিদিন আমরা নানা ধরনের কাজ করি এবং সেইসব কাজের জন্য বহু রকম জিনিস ব্যবহার করতে হয়। এরপর কাজের শেষে দেখা যায় কিছু কিছু জিনিস আমাদের কাজে লাগে না। সেগুলি তখন অবব্যবহারযোগ্য বা অপ্রয়োজনীয় বলে আমরা ফেলে  দিই। যেমন- খাবারের প্যাকেট, ভাঙাচোরা খেলনা, শিশি বোতল ভাঙ্গা, কেটে যাওয়া বাল্ব ,ও টিউব লাইট, ময়লা কাগজ ইত্যাদি। এগুলি আমরা  বর্জন করি বা ফেলে দিই। এগুলিই হলো বর্জ্য পদার্থ।
প্রকৃতপক্ষে দৈনন্দিন জীবনে বাতিল সব পদার্থই বর্জ্য।
 

অন্যভাবে বলতে পারো— যেকোনো কঠিন, তরল, কিংবা গ্যাসীয় পদার্থ যেগুলি আমাদের কোনো কাজে লাগে না অর্থাৎ ফেলে দেওয়া প্রয়োজন, সেগুলি হল বর্জ্য পদার্থ। বাড়ির মতো কলকারখানা হাসপাতাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অফিস আদালতেও এই ধরনের অপ্রয়োজনে জিনিস বা বর্জ্য পদার্থ বেরোয় এবং তার পরিমাণ অনেক বেশি। আর এগুলিই নোংরা বা আবর্জনা হয়ে বাড়ির আশেপাশে বা রাস্তার ধারে পড়ে থেকে পরিবেশকে দূষিত করে।


♼বর্জ্যের প্রকারভেদ- সাধারণভাবে বর্জ্য পদার্থ সমূহকে তিনটে বিভাগে ভাগ করা যায়।— কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয়।

♻ কঠিন বর্জ্য পদার্থ: বর্জ্য পদার্থের মধ্যে কাচ, প্লাস্টিক, টিন, ব্যাটারি, কাগজ, নানারকম ধাতব জিনিস ,ছাই ,কাপড় বা ন্যাকড়া, টায়ার, টিউব প্রভৃতি কঠিন বর্জ্য পদার্থ।
       

তরল বর্জ্য পদার্থ: এগুলি গৃহস্থালি, কলকারখানা, হাসপাতাল, প্রভৃতি থেকে নির্গত হয়, যেমন– মল-মূত্র থেকে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ, বাড়িঘর‐ কলকারখানা নিঃসৃত নোংরা জল, সাবান ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জল ইত্যাদি।


গ্যাসীয় বর্জ্য পদার্থ: কলকারখানা ও গাড়ি থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত গ্যাস, যেমন‐ সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড প্রভৃতি জাতীয় বর্জ্য পদার্থ।

   

          আবার, বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে বর্জ্য পদার্থ সমূহে দুটি বিভাগে ভাগ করা যায়:—
বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ: এগুলি কঠিন তরল, গ্যাসীয় ও তেজস্ক্রিয় অর্থাৎ সব রকমই হতে পারে,যেমন– পারদ, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি ধাতু, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই,  অব্যবহৃত কীটনাশক, ভাঙ্গা কম্পিউটার সামগ্রী, ব্যাটারি, নাইট্রিক অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ। এগুলি মানুষ ও পশু পাখিদের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
 বিষহীন বর্জ্য পদার্থ: খাদ্যজাত বর্জ্য পদার্থ, কাচ, ধুলো, কংক্রিট টুকরো প্রভৃতি বিষহীন বর্জ্য পদার্থ। 


বর্জ্য পদার্থের উৎস: প্রধানত সাতটি উৎস থেকে বর্জ্য পদার্থ সৃষ্টি হয়। এগুলি হল:—
🐧 গৃহস্থালির বর্জ্য: বাড়ির দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে যেসব বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয় সেগুলো এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন– শাকসবজি ও ফল-মূলের উচ্ছিষ্ট, মাছ-মাংসের ফেলে দেওয়া অংশ প্রভৃতি।
🐧 শিল্প বর্জ্য: কলকারখানা থেকে নির্গত কঠিন, তরল গ্যাসীয় ও অর্ধতরল প্রকৃতির বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য পদার্থকে শিল্প বর্জ্য বলা হয়।যেমন- চামড়া কারখানার ক্রোমিয়াম যৌগ, আকরিক নিষ্কাশন প্রক্রিয়ায় নির্গত নানা প্রকার ধাতু, বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি।
🐧 কৃষিজ বর্জ্য: কৃষিজাত দ্রব্য থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থকে কৃষিজ বর্জ্য নামে অভিহিত করা হয়।যেমন – আখের ছোবড়া, খড়, ধানের খোসা, নারকেলের ছোবড়া, প্রাণিজ বর্জ্য প্রভৃতি।
🐧 পৌরসভা বর্জ্য: শহরের বা পৌর এলাকার বাড়ি, অফিস, বিদ্যালয়, বাজার, রেস্টুরেন্ট, হোটেল প্রভৃতি সৃষ্ট বর্জ্যকে পৌর বর্জ্য বলে ।এর মধ্যে থাকে শাকসবজির অবশিষ্ট অংশ, কাগজ, কাপড়, ডাবের খোলা, প্লাস্টিক, ধাতব টুকরো প্রকৃতি।
🐧 জৈব বর্জ্য: প্রধানত প্রাণী ও উদ্ভিদ থেকে যেসব বর্জ্য তৈরি হয় সেগুলি জৈব বর্জ্য ।যেমন– মাংস উৎপাদনকারী কারখানা গুলি থেকে নির্গত প্রাণীজ বর্জ্য, মাছের উচ্ছিষ্ট ফুল- ফল- সবজি, বাগানের বর্জ্য প্রভৃতি।
🐧 চিকিৎসা- সংক্রান্ত বর্জ্য: হাসপাতাল, নার্সিংহোম সহ বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা কেন্দ্রের আবর্জনা এই শ্রেণীর অন্তর্গত।
🐧 অসংক্রামক বর্জ্য পদার্থ: যেমন ঔষধের ফাইল, প্লাস্টিক থালা প্রভৃতি।
🐧 সংক্রামক বর্জ্য পদার্থ: সিরিঞ্জ, ছুচ, কাঁচি, ব্লেড, তুলো, গজ, রক্ত, ব্যান্ডেজ, অপারেশন সংক্রান্ত আবর্জনা প্রভৃতি।
🐧 তেজস্ক্রিয় বর্জ্য: পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য, যেমন-  ছাই, ভারী জল, চিকিৎসায় ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় পদার্থ এই শ্রেণীর অন্তর্গত।


                     চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্য পদার্থ

                  পরিবেশের উপর বর্জ্যের প্রভাব

জল, বায়ু, মাটি প্রভৃতি পরিবেশের মৌলিক উপাদানগুলি বর্জ্যের মাধ্যমে ক্রমশ দূষিত হতে থাকে। যেমন—

🌍 জলের উপর প্রভাব: জলের অপর নাম জীবন। পরিবেশের অন্যতম প্রধান উপাদান তথা নিয়ন্ত্রক জল। অথচ সমুদ্র, জলাশয়, নদী, এমনকি পুকুরও এখন হয়ে উঠেছে বর্জ্য পদার্থ জমা হওয়ার স্থান। এর ফলে জল দূষিত হয়ে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের নানাভাবে ক্ষতি হচ্ছে, তাদের বংশবিস্তার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, অপমৃত্যু ঘটছে এবং সর্বোপরি জলজ বাস্তুতন্ত্র বিপর্যস্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে ।দূষিত জলের মাধ্যমে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দেহে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হয় । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মানবদেহের শতকরা ৫০ ভাগ রোগই জলবাহিত।

🌍 বায়ুর উপর প্রভাব: বর্জ্য পদার্থ পচনের ফলে বায়ু দূষণ ঘটে । তা ছাড়া জমা বর্জ্য পদার্থের আগুন লাগলেও বায়ু দূষিত হয়। এর ফলে জনসাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

🌍 মাটির উপর প্রভাব: গৃহস্থালী ও কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, যেমন- ডিটারজেন্ট পাউডার, কীটনাশক, প্লাস্টিক, পলিথিন, ধাতু খন্ড, প্রভৃতি মৃত্তিকা সঙ্গে মিশে তার স্বাভাবিক চরিত্র নষ্ট করে। তার ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা নষ্ট হয় এবং মৃত্তিকা বন্ধা হয়ে যায়। মৃত্তিকা দূষণ উদ্ভিদ খাদ্যশৃংখল এর মধ্যে দিয়ে উৎপাদক হয়ে খাদকের দেহে প্রবেশ করে নানারকম রোগ সৃষ্টি করে।

🌍 জনস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে সংক্রামক ও অসংক্রামক বর্জ্য মিশে গেলে শুধু ওই সব প্রতিষ্ঠানেই নয়, আশেপাশের এলাকাতেও বিভিন্ন প্রকার রোগ, যেমন- টেটেনাস, হেপাটাইটিস, আন্ত্রিক, চর্মরোগ, এলার্জি, ফুসফুসের রোগ, টাইফয়েড প্রকৃতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।



Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভারতের কৃষি

সমুদ্রস্রোত

শিলা (Rocks)